খাগড়াছড়িখাগড়াছড়ি সদরপ্রধান খবর

হাজার প্রদীপের আলো ও আকাশে ফানুসে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রার্থনা

পাহাড়ের রাতের আকাশ সোমবার (৬ অক্টোবর) ভরে উঠেছিল শত শত ফানুসের আলোয়, আর বিহার প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়েছিল হাজার প্রদীপের আলোয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা এবারও খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে।

ভোর থেকেই জেলার য়ংড বৌদ্ধ বিহার, বিশ্বশান্তি বুদ্ধ ধাতু বোগো জাদি, ধর্মপুর, সারিপুত্র পালিটোল ও পানখাইয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে ভিড় জমে দায়ক-দায়িকাদের। চলে বুদ্ধ পূজা, পদ্ম ও শাপলা ফুল দান, চীবর দান, অষ্টপরিষ্কার দান, পিণ্ডদানসহ নানা ধর্মীয় আচার।

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে পালন করা হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিনটি আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও নতুন জীবনের পথে যাত্রার প্রতীক। দায়ক-দায়িকারা অতীতের সব গ্লানি পেছনে ফেলে নতুনভাবে শুরু করার শপথ নেন এবং সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন।

সূর্যাস্তের পর ভিন্ন আবহে ভরে ওঠে বিহার প্রাঙ্গণ। হাজার প্রদীপের ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ, আর শান্তি ও মঙ্গলের বার্তা ছড়িয়ে দিতে রাতের আকাশে উড়ে যায় শত শত ফানুস।

প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা প্রকৃতি চৌধুরী বলেন,
“আমরা নিজেরা যেমন প্রার্থনা করি, তেমনি সব জীবের সুখ, শান্তি ও মঙ্গলের কামনায় ফানুস উড়াই এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোর পথের আহ্বান জানাই।”

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে ফানুস শুধু উৎসবের আনন্দ নয়, এটি আধ্যাত্মিক মুক্তি ও নতুন সূচনার প্রতীক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনও তেমনি অন্ধকার থেকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোয় ফিরে আসার বার্তা দেয়।

খাগড়াছড়ির প্রতিটি বিহার এই রাতে পরিণত হয় আলোর উৎসবভূমিতে। প্রবারণা পূর্ণিমা তাই শুধু ধর্মীয় উৎসব নয় — এটি শান্তি, সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও মানবতার এক আলোকিত প্রতীক।

Related Articles

Back to top button