স্বাস্থ্য পরামর্শ

চিকুনগুনিয়া কেন বাড়ছে

ডা. মিজানুর রহমান

দেশে চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকুনগুনিয়া মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি সাধারণত হঠাৎ করে জ্বর আসা, শরীর ব্যথা করা এবং শরীরের অস্থিসন্ধিতে ব্যথার মাধ্যমে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষ প্রায়ই ডেঙ্গু বা জিকা ভাইরাসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। তবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণে সাধারণত অস্থিসন্ধিতে প্রচন্ড ব্যথা থাকে।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এডিস মশার কামড় থেকে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা, বিশেষ করে ভোর ও বিকেলের সময় বেশি সক্রিয় থাকে। অপরিষ্কার পরিবেশ, জমে থাকা পানি, যেমন টব, টায়ার, ডাবের খোসা বা ফুলদানিতে এই মশার বংশবিস্তার হয়।

লক্ষণ

হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর দেখা যায়। জ¦রের তাপমাত্রা ১০৩-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। হাঁটু, কাঁধ, হাত, আঙুলে জোড়ায় জোড়ায় প্রচ- ব্যথা দেখা যায়, জ¦রের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা হয়। শরীরে লালচে র‌্যাশ বা দানা দেখা দেয়। পেশিতে ব্যথা হয়। অনেক বেশি দুর্বলতা বোধ ও মাঝে মাঝে বমি ভাব হয়।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সাধারণত গুরুতর রোগ নয়। তবে বেশি বয়সী এবং ইতিমধ্যে অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা আছে (ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনিতে সমস্যা ইত্যাদি), এমন ব্যক্তিদের বেলায় আরও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। জ্বরের কারণে অনেক ঘাম হয়। এর ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, স্যালাইন, সুপ বা ফলের জুস পান করা। ব্যথা ও জ্বরের জন্য

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়া। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, দেহের অনাবৃত স্থানে মশা নিরোধক লোশন ব্যবহার করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।

যা করবেন না

বাড়ির আশপাশে বা ছাদে, টবে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা। ফুলদানি, টায়ার, ডাবের খোসা ফেলে দিন বা ঢেকে রাখুন। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। মশা নিরোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন। ময়লা আর্বজনা জমিয়ে না রেখে পরিষ্কার করে রাখা। পর্দায় যেন মশা লুকিয়ে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা। বিশেষ করে জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে বা গাঁটের ব্যথা না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ নয়, তবে যথাযথ যতœ না নিলে দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

Back to top button