স্বাস্থ্য পরামর্শ

মৌসুমি সর্দি-জ্বর প্রতিকার

ডা. রাশেদ মনজুর

আবহাওয়া বদলালে অনেকেরই ঠান্ডা সর্দি-জ্বর হয়। নাক দিয়ে পানির ধারা ঝরে। হ্যাঁচ্চো! অনেকের গলা খুসখুস, কফ, জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ধরা, চোখ ছলছল, শরীরও গরম। ক্লান্তিও হয় শেষে।
ক্রমে ক্রমে শ্লেষ্মা হতে পারে হলুদ, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের। কম কম জ্বর। তবে বেশিও হতে পারে। একে আমরা বলি সাধারণ ঠান্ডা লাগা। মৌসুমি অসুখ। এর পেছনে কোল্ড ভাইরাসের দুশরও বেশি রকম জানা আছে চিকিৎসকদের। সচরাচর যে দুটো ভাইরাসের প্রকোপ বেশি, সে দুটো হলো রাইনো ভাইরাস ও করোনা ভাইরাস। উপসর্গও তাই হতে পারে নানা কিসিমের। শ্বাসনালির ওপর অংশ নাক ও গলাতে আক্রমণ বেশি। আপাত নিরীহ অসুখ, তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে শ্বাসনালির নিচের ভাগ ও ফুসফুসও আক্রান্ত হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এমন ঠান্ডা লাগলে সতর্ক থাকতে হবে বেশি। হঠাৎ নিউমোনিয়া হওয়ার ঘটনা ঘটে যায়। কোল্ড ভাইরাস ধরলে উপসর্গ দেখা দেয় এক থেকে তিন দিন পর। অসুখটি ছোঁয়াচেও বটে। সরাসরিও সংক্রমণ ছড়ায়। হাঁচি দিলে বা কাশি দিলে বাতাসে যায়, বিন্দুকণা সংক্রমণ হয়, অন্য কেউ সেই বায়ু সেবন করলে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় অপ্রত্যক্ষ উপায়ে ছড়ায় সংক্রমণ, কেউ হাঁচি দিলে সেই হাঁচি হাত দিয়ে মুছে দরজার হাতলে হাত লাগালেন, এরপর অন্য কেউ সেই হাতল ধরে দরজা খুললেন, সেই হাত লাগালেন নিজের মুখে বা চোখে সংক্রমণ ছড়াল। হাঁচি হাত দিয়ে মুছে অন্যের সঙ্গে হাত মেলালেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। উপসর্গ শুরু হওয়ার দু-তিন দিন আগ থেকেই এটি ছোঁয়াচে হয়ে যায় এবং উপসর্গ চলে যাওয়া পর্যন্ত থাকে, দুই সপ্তাহ হতে পারে স্থিতিকাল।

প্রতিকার

তরল গ্রহণ করলে বেশ আরাম। পানি পান, ফলের রস, সব রকমের তরল বেশি বেশি পান করতে হবে। গরম আদা-চা বেশ ভালো। গ্রিন টি চমৎকার। গরম স্যুপ আরও ভালো। মুরগির স্যুপের প্রদাহরোধী তরল পানে শ্লেষ্মা হয় তরল ও পাতলা, শ্লেষ্মা বেরোয় সহজে, অবাধে। পানিশূন্যতা হলে তাও ঠেকায়। দুই ঘণ্টা পরপর পানি পান। শরীর সতেজ থাকে। খুব সকালে এক গ্লাস গরম পানি বা লেবুপানি বেশ উপকারী। আদা কুচি চিবানো, তুলসী পাতার রস, মধু বেশ উপকারী। ঘরোয়া চিকিৎসা হলেও বেশ ভালো। লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলা খুসখুস চলে যায়। শ্বাসের সঙ্গে গরম পানির ভাঁপ নিলে নাক বন্ধে আরাম হয়। বাজারের ডিকনজেস্টেন্ট ওষুধ, নাকের ড্রপ, অ্যান্টিহিস্টামিনিক ওষুধের প্রয়োজন লাগতে পারে। নিটোল ঘুম দিলে যেমন আরাম হয়, তেমনি দেখা গেছে যাদের ৮ ঘণ্টার বেশি সময় ঘুম হয়, তাদের ঠান্ডাও লাগে কম। গরম পানিতে গোসল বা স্টিমবাথ বেশ উপকারী। স্যালাইন ন্যাজাল ওয়াশ নিতে পারলে নাক বন্ধে আরাম হয়। ভিটামিন সি সাধারণ ঠান্ডা লাগায় বেশ কাজ দেয়।

চিকিৎসা

কোল্ড ভাইরাস সংক্রমণে খুব জ্বর হয় না এবং খুব ক্লান্তিও হয় না। ওষুধ উপসর্গ লঘু করে, তবে এটি প্রতিরোধ করে না, নিরাময় করে না বা অসুখের কাল হ্রস্ব করে না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনেক সময় জরুরি। জ্বর যদি ১০৩ ডিগ্রির বেশিএবং দুদিনের বেশি থাকে। ঘাম হয়, শীত শীত ভাব, কফ শ্লেষ্মা গাঢ হলুদ, গ্লান্ড ফুলে যায়, বমি বা পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তার দেখাতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বেশি জরুরি। ঠান্ডা-সর্দি যাতে না ছড়ায় তাই হাত নিয়মিত ও সঠিকভাবে ধুতে হবে, বিশেষ করে নাক ও মুখ স্পর্শ করার পর এবং খাবার নাড়াচাড়া করার পর। হাঁচি ও কাশি দিতে হবে টিস্যুতে। এতে ভাইরাসবাহী বিন্দুকণা নাক ও মুখ থেকে বাতাসে যাবে না ও অন্যদের মধ্যে ছড়াবে না। সেই টিস্যুটি ফেলে দিতে হবে। ডিসপোজেবল পেপার টাওয়েল ব্যবহার করতে হবে। নিজের কাপ- প্লেট কেবল নিজে ব্যবহার করবেন।

Back to top button