মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ কেন হয়
ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের ফলে সাবআরকনয়েড হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এবং তার কারণগুলোও নির্ণয় করা দরকার। তাহলেই নিরাপদ থাকা যায়।
ব্রেন অ্যানিউরিজম কী : মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের ফলে সাবআরকনয়েড হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে আপনার মস্তিষ্কের রক্তনালির যে বেলুনিং বা বুলিং (ballooning or bulging) রয়েছে তা ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এটিকে হেমোরেজিক স্ট্রোক (hemorrhagic stroke) বলে।
কারণ : ব্রেন অ্যানিউরিজমের অনেক কারণের মধ্যে বংশগত সম্পর্ক। উচ্চ রক্তচাপ। মাথার গুরুতর আঘাত। ধূমপান উল্লেখযোগ্য
লক্ষণ : বেশিরভাগ মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমগুলো ফাটে না এবং লক্ষণগুলো বোঝা যায় না। অতএব, এই লক্ষণগুলো সহজ শনাক্তকরণ নয়। এই বিঘিœত অ্যানিউরিজমগুলো অন্যান্য অবস্থার জন্য প্রায়ই পরীক্ষার সময় শনাক্ত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমগুলো ফেটে গেলেই তার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে :
হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা।
ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। বমি বমি ভাব। চোখের কাছে বা পেছনে ব্যথা। অস্পষ্ট দৃষ্টি বা দ্বিগুণ দৃষ্টি। মুখের একপাশ অবশ হওয়া বা অসাড়তা।
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের ফলে সাবআরকনয়েড হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ধরনের রোগীদের ভেতর প্রতি ৫ জনের মধ্যে প্রায় ৩ জন রোগীই ২ সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায়।
রোগ নির্ণয় : অ্যানজিওগ্রাম হলো অ্যানিউরিজম শনাক্তকরণের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। এটি রক্তনালিগুলোর দুর্বল দাগগুলো চিত্রিত করে। চিকিৎসক রোগীর পায়ের রক্তনালিগুলোর মাধ্যমে একটি ক্যাথেটার নামক একটি ছোট নমনীয় নল প্রবেশ করিয়ে দেবেন। এরপর রোগীর ঘাড়ের রক্তনালিগুলোতে মস্তিষ্ক পর্যন্ত প্রসারিত ক্যাথেটারকে গাইড করবেন। রোগীর মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো দেখতে কনট্রাস্ট ডাই ইনজেকশনের পরে তিনি এক্স-রে নেবেন। এর ফলে চিকিৎসককে সহজেই মস্তিষ্ক অ্যানিউরিজমের অবস্থান নির্ণয় করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও ব্রেন অ্যানিউরিজম শনাক্তের জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান, সিএসএফ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা : মাথায় রক্তক্ষরণের বিপদ শুধু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। একটি পন্থা হলো পেশেন্টের কুঁচকি দিয়ে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে মগজের সংশ্লিষ্ট ধমনি পর্যন্ত চলে যাওয়া। ওই ক্যাথিটার দিয়েই অ্যানিউরিজমে প্লাটিনামের অতি সূক্ষ্ম প্যাঁচানো তার ঢোকানো হয়, যার ফলে ফোলা জায়গাটাতে আর কোনো রক্ত ঢুকতে পারে না। অ্যানিউরিজমটিকে মস্তিষ্কের রক্তচলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, তার ভেতরের রক্তও আর জমাট থাকে না, বরং তরল হয়ে আসে। অন্য উপায়টি হলো সরাসরি মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার। সে জন্য সবচেয়ে কাছ দিয়ে অ্যানিউরিজম অবধি পৌঁছানো দরকার। অতি সাবধানে কাজ করতে হয়। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অ্যানিউরিজমটায় টাইটানের তৈরি ক্লিপ লাগাতে হয়। চাপ বাঁধা জায়গাটার ঠিক তলায় ক্লিপ বসিয়ে ফোলা জায়গাটাতে আর যাতে রক্ত না ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা হয়।






