বান্দরবানপ্রধান খবর

বান্দরবানে কফি ও কাজুবাদাম চাষ প্রকল্পে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ

আকাশ মারমা মংসিং, নিজস্ব প্রতিবেদক: পাহাড়ের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গ্রহণ করা হয় কয়েক কোটি টাকার কফি ও কাজু বাদাম চাষ প্রকল্প। যা বাস্তবে নামসর্বস্ব ভুয়া প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক উপসচিব জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রকল্পের নামে মোটা অংকের এই টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কৃষকরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় তাদেরকে দুর্বল চারা বিতরণ করা হয়েছে এবং চাষাবাদ ও পরিচর্যায় প্রয়োজনীয় উপকরণ কিংবা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন এ প্রতিবেদকের উপর রাগান্বিত হন এবং কফি চারা কেনো বেঁচে থাকেনি সে সম্পর্কে তিনি উত্তর দেবেন না বলে জানান। এ প্রশ্নের উত্তর পেতে তিনি মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেনো যথাযথভাবে প্রদান করা হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তরও তিনি এড়িয়ে যান।

সরেজমিনে এসব প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কিংবা দৃশ্যমান অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পার্বত্য জেলা বান্দরবানে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কফি ও কাজু বাদাম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি- এই তিন উপজেলার প্রায় ১৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেসব কোটি টাকার প্রকল্প নামমাত্র দেখিয়েছে। অথচ যেসব কৃষকদের নাম দেয়া হয়েছে তারা এই প্রকল্পের আওতায় কেউ আসেনি। বরং সেসব কৃষকদের কফি কিংবা কাজু বাদাম নামমাত্র টাকা দিয়ে কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। আর পাহাড়ের কফি ও কাজু বাদামের বিপ্লবের নামে লুটপাট করে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ নিজেদের পকেট ভারি করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বিগত তিন অর্থ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজু বাদাম ও কফি চাষ প্রকল্পে বরাদ্দ হয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু টাকা এলেও এর কোনো প্রকল্পই দৃশ্যত বাস্তবায়ন হয়নি। বান্দরবানে তিন উপজেলার কফি বা কাজু বাদাম তো দূরের কথা সেসব জমিতে শুধু দেখা মিলেছে করলা ক্ষেত আর জুমের ফসল। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সংগঠনের প্রকল্পের আবাদি ক্ষেতের ছবি তুলে নিজেদের প্রকল্প বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং অর্থ লুটে নিয়েছেন প্রকল্পের উপ-সচিব জসিম উদ্দিন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০২২ সালে। আর শেষ হয় ২০২৫ সালের জুনে। তিন পার্বত্য জেলায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসে বরাদ্দ নেয়া হয় ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এছাড়াও ২০২৩ ও ২০২৪ এই দুই অর্থ বছরে বরাদ্দ নেয়া হয় ১০ কোটি ২৬ লাখ এবং ১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরর তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ নেয়া হয়। কোটির টাকার এই প্রকল্প শুধু নামসর্বস্ব দেখালেও কফি ও কাজু বাদামের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাইনি।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, চলতি বছরের পূণরায় পাহাড়ের কফি ও কাজু বাদামের বিপ্লব ঘটবে এমন সংবাদের শিরোনাম প্রকাশিত করে দ্বিগুণে কোটি টাকা প্রকল্প বরাদ্দ আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পা.চ.উ,বো প্রকল্প সচিব জসিম উদ্দিন। একাধিক গণমাধ্যম বা রাজধানী প্রথম সারির গণমাধ্যমকে নিয়ে এসে পক্ষপাতমূলক ভুয়া প্রতিবেদন করনো হয়েছে। শুধু তারা নন জেলা শহরেও গণমাধ্যমকর্মীরাও প্রকল্পের সচিবের পক্ষ নিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করার অভিযোগ আছে। এছাড়াও এই কফি-কাজু বাদাম প্রকল্পের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করা জন্য বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকেও অর্থের প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পের পরিচালক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকদের অভিযোগ, নামেই মাত্র কফি ও কাজু বাদামের চারা বিতরণ করা হয়েছে। বাগানে লাগানো পর সেসব কফি চারা মারা গেছে। গাছের পরিচর্যা করতে বিভিন্ন উপকরণ দেয়ার কথা থাকলেও কৃষকদের কাছে তা দেয়া হয়নি।

কথা হয় কফি প্রকল্পের আওতায় থাকা রোয়াংছড়ি উপজেলার প্লেদয় পাড়ার মেনপয় ম্রো সাথে। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২০০টি কফি চারা দেয়া হয় উন্নয়ন বোর্ড থেকে। এসব চারা নার্সারি থেকে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু অধিকাংশ যেসব চারা দেয়া হয়েছে সব চারা ছিল দুর্বল। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, কফি চারা পরিচর্যা জন্য যেসব সামগ্রি দেয়ার কথা ছিল সেসব জিনিস কোনো কিছু পাননি বলে অভিযোগ করেন।

রুমা বটতলী পাড়া কৃষক ক্যসাচিং মারমা বলেন, উন্নয়ন বোর্ড আর কৃষি বিভাগ থেকে কফি চারা দিয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগের কফি চারা বেঁচে আছে। আর উন্নয়ন বোর্ডের চারা মারা গেছে। চারা পরিচর্যা করতে যেসব সামগ্রি দেয়ার কথা সেগুলো কেউ পাইনি বলে অভিযোগ করেন।

মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কফি চারা সব মারা গেছে এবং কেনো মারা গেছে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাগান্বিত হয়ে কফি ও কাজু বাদাম প্রকল্পের উপ-সচিব মো. জমিস উদ্দিন বলেন, আপনি এবিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন না। কেনো মারা গেছে সেটা মাঠ পর্যায়ের যারা কাজ করছে তারা বলবেন। কৃষকদের সুযোগ সুবিধা কেন দেয়া হয়নি এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুই না বলে এড়িয়ে যান।

Related Articles

Back to top button