কাপ্তাই

৯৪ দিনের বিরতি শেষে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু

তিনমাস দু’দিন বন্ধ থাকার পর মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় কাপ্তাই হ্রদে জেলে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শনিবার ২ আগস্ট দিনগত রাত ১২টার পর হ্রদ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে নৌকা নিয়ে হ্রদে নামে জেলেরা।

রোববার (৩ আগষ্ট ) সকাল থেকে আহরিত মাছ পৌঁছতে শুরু করে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি, কাপ্তাই, মহালছড়ি, মারিশ্যা অবতরণ ঘাটে। কেন্দ্রগুলোতে মাছের ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহনের ব্যস্ততা ও প্রতিটি কেন্দ্র ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে ওঠে।

https://youtu.be/xx1yfAYWVzM?si=hrYJmTXCtCLAoFFs

প্রথম দিনে তুলনামূলকভাবে ছোট মাছ বেশি ধরা পড়েছে। চাপিলা, কাঁচকি ও চিংড়ি বেশি দেখা গেছে। তবে পানি কমতে শুরু করলে কার্প জাতীয় বড় মাছের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে রাঙামাটি ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার থেকে মাছ নামানো হচ্ছে। সেখানে দরদাম শেষে মাছ বরফসহ ড্রামে ভরে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জেলেরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর হ্রদে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে তারা খুশি।

একজন জেলে বলেন, তিন মাস বেকার বসে ছিলাম। এখন আবার হ্রদে নামতে পেরে ভালো লাগছে। প্রথম দিন তাই মাছ একটু কম, তবে আশা করছি সামনে দিন ভালো যাবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক কমান্ডার (নৌবাহিনী) মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, শনিবার মধ্যরাত থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। চারটি ঘাটেই মাছ আসছে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করা হচ্ছে। আশা করছি, এ বছর গত বছরের তুলনায় আরও বেশি মাছ আহরণ সম্ভব হবে।

বিএফডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ আহরণ করে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

রাঙামাটি বিএফডিসির ক্ষেত্র সহকারী মো. রাশেদ বলেন, প্রথম দিনে মাছ কিছুটা কম পাওয়া গেছে। তবে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সামনে দিনগুলোতে মাছ আহরণ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশাবাদী।

মৎস্য ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, মাছের আকার ছোট হলেও ব্যবসা জমে উঠবে। আমরা প্রস্তুত আছি বরফ, ড্রাম, পরিবহনের সব কিছু নিয়ে।

আমাদের কাপ্তাই প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ ৩ মাস ২দিন পর নিষেধাজ্ঞা শেষে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। ফলে কয়েক হাজার জেলে ও ব্যবসায়ীর মাঝে কর্মচাঞ্চল্যে ফিরেছে।

রোববার সকাল ৭ টায় কাপ্তাই মৎস্য অবতরণ উপকেন্দ্র দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের মুখরিত। কাপ্তাই লেক মৎসজীবিরা বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল,বিলাইছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা হতে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে মাছ নিয়ে আসছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

সারি সারি চাপিলা, কাচকি, আইড়, বাইম মাছ, ফলি ও জাতীয় মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ। আর ব্যবসায়ীরা শুল্ক পরিশোধ করে সেসব মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে বরফ দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে তুলছে ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে । ব্যবসায়ী এবং জেলেদের মাঝে দীর্ঘদিন পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এসময় সবাইকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। মাছ আহরণের আগের দিন সকল ব্যবসায়ীরা দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে মাছ আহরণের কার্যক্রম শুরু করেন।

কাপ্তাই মৎস্য উন্নয়ন উপ কেন্দ্রে শাখা ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, ‘২ আগস্ট মধ্য রাত হতে কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। রোববার সকাল ৬টা হতে জেলেরা কাপ্তাই লেক হতে মাছ ধরে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে এই অবতরণ কেন্দ্রে মাছ নিয়ে আসছে। লেকে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় বড় মাছ পাওয়া না গেলেও ছোট মাছের মধ্যে কাচকি, চাপিলা মাছ এবং মাঝারি সাইজের আইড় মাছ নিয়ে তাঁরা এসেছেন। এখানে এসে আমাদেরকে শুল্ক পরিশোধ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাকে করে মাছ নিয়ে যাচ্ছেন।’

কাপ্তাই মৎস্য ব্যবসায়ী সভাপতি মো. বেলাল হোসেন, সম্পাদক নবী হোসেন মো. আমিন শরীফ সওদাগার জানান, ছোট প্রজাতির মাছ আসছে। পানি বেশি থাকায় বড় মাছ ধরা পড়ে নাই, পানি কমলে বড় মাছ ধরা পড়বে।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর মে মাস থেকে তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে, যাতে মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। এ বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিএফডিসির প্রস্তুতির জন্য তা ২ আগস্ট রাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাপ্তাই হ্রদে প্রায় ২৭ হাজার জেলে মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

Related Articles

Back to top button