মিয়ানমারের খনিজে চোখ যুক্তরাষ্ট্রের
দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মিয়ানমারের বিরল খনিজসম্পদে আগ্রহী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। খনিজসম্পদে চীনের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন এবার নতুন করে মনোনিবেশ করেছে মিয়ানমারের কাচিন অঞ্চলে। এরই মধ্যে জাতিগত কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে খনিজসম্পদ নিয়ে চুক্তি করার সম্ভাবনাসহ আরও বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, যা রদবদল ঘটাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিয়ানমার নীতিতে।
অঞ্চলটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) নিয়ন্ত্রণে আছে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভারী বিরল খনিজের মজুদ। এই খনিজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে এই খনিজ উৎপাদন হয় খুব কমই। আন্তর্জাতিক জ¦ালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ সরবরাহ করে চীন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজসম্পদটি আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় জড়িত যুক্তরাষ্ট্র এখন বিরল এই খনিজের মজুদকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই খনিজ পেতে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে তার মধ্যে একটি হলো মিয়ানমার জান্তা সরকারকে এড়িয়ে সরাসরি কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করা। আরেকটি বিকল্প হলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে একটি বৃহত্তর শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো। যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যবসায়ী লবিস্ট, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সাবেক এক উপদেষ্টা বিদ্রোহী গোষ্ঠী কেআইএয়ের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় জড়িত কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থাকে রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল চার সূত্র।
প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের খনিজসম্পদ পেতে গেলে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ওয়াশিংটনকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার থেকে এই খনিজ সরবরাহের ক্ষেত্রে যেমন বড় বাধা আছে, তেমনি কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে নাখোশ হতে পারে চীন। কারণ, কাচিন থেকেই বিরল খনিজ চীনে যায় এবং সেখানে প্রক্রিয়াজাত হয়। এখন বিরল খনিজ পেতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবে জড়িত হলে তা হবে দেশটির নীতিতে এক বড় ধরনের মোড় পরিবর্তন। কারণ, মিয়ানমারের জান্তা নেতাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমার জান্তার কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতে রপ্তানি হওয়া মিয়ানমারের বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাবও রয়েছে।
গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কিছু প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে বলে জানিয়েছেন ভ্যান্সের কার্যালয়ের এক সূত্র। ওই বৈঠকে ছিলেন মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রধান অ্যাডাম কাস্তিলো। তিনি বলেন, মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার এবং কাচিন বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।